দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের চিত্র দিন দিন আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ছয়টি ব্যাংকে তো খেলাপি ঋণ ৯০ শতাংশেরও বেশি।
খেলাপি ঋণের সার্বিক চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণস্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। মোট ঋণের তুলনায় যা প্রায় ৩৬ শতাংশ।
এক বছর আগে, অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তখন খেলাপির হার ছিল প্রায় ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
কোন ব্যাংক তুলনামূলক ভালো অবস্থায়
সব ব্যাংকের অবস্থা এক রকম নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টির খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। আরও ১৩টি ব্যাংকের খেলাপি ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। ২০ থেকে ৫০ শতাংশ খেলাপি রয়েছে ৮টি ব্যাংকে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হলো-১৭টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের বেশি।
৯০ শতাংশের বেশি খেলাপি
খেলাপি ঋণের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ছয়টি ব্যাংক। এর মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে প্রায় সব ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এ ছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৯০ শতাংশের ওপরে।
বেসরকারি ব্যাংকে বাড়তি চাপ
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির মোট ঋণের বড় অংশই এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশেও খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের অবস্থা ও স্বস্তিদায়ক নয়
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যেও খেলাপি ঋণের চাপ বাড়ছে। জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকেও অর্ধেকের বেশি ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
কেন সামনে আসছে প্রকৃত খেলাপি চিত্র
সংশ্লিষ্টদের মতে, আগের সরকারের সময়ে অনেক ঋণ প্রকৃত অর্থে খেলাপি হলেও বিভিন্ন নীতি সহায়তা ও ছাড়ের কারণে নিয়মিত হিসেবে দেখানো হতো। সরকার পরিবর্তনের পর সেই সুযোগ কমে যাওয়ায় খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র এখন সামনে আসছে। এতে হঠাৎ করেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বড় আকারে বেড়ে গেছে।
খারাপ অবস্থায় থাকা কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই উদ্যোগের আওতায় এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক রয়েছে।





