বীমা খাতে অনিয়ম, স্বচ্ছতার ঘাটতি ও দাবি নিষ্পত্তিতে গড়িমসি দীর্ঘদিনের সমস্যা। তারপরও সব কোম্পানি দুর্বল নয়। দেশে কয়েকটি লাইফ বীমা নিয়মিত ও উচ্চ হারে দাবি পরিশোধ করে আস্থা ফিরিয়েছে। নন-লাইফে চিত্র তুলনায় খারাপ; অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যতিক্রম। তদারকি ও সুশাসন বাড়লে গ্রাহকের ভরসা সুদৃঢ় হতে পারে।
বীমা খাতে আস্থার সংকট ও বাস্তবতা
দীর্ঘদিন ধরে দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি, অযথা কাগজপত্রের চাপ এবং শাখা থেকে শাখায় ঘুরতে হয়, এসব কারণে অনেক গ্রাহক বীমাকে ‘আস্থাহীন’ খাত হিসেবে দেখেন। তবু পুরো শিল্পই নেতিবাচক নয়; কিছু প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে দাবির বড় অংশ সময়মতো পরিশোধ করে গ্রাহকের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
বীমা উন্নয়ন কতৃপক্ষের ( আইডিআরএ) তথ্যনুযায়ী, দেশে ৩৫টি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কার্যক্রমে আছে। এর মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯৫%এর বেশি দাবি নিষ্পত্তি করেছে। এ সময়ে লাইফ কোম্পানিগুলোর কাছে মোট দাবি ছিল ৫,৫৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ফেরত দেওয়া হয়েছে ১,৯৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, নগদ ফেরতের হার এখনো কম হলেও উচ্চ পারফরম্যান্সকারী কোম্পানিগুলো আস্থা তৈরি করছে।
শীর্ষ পারফরমারদের তালিকা
গার্ডিয়ান লাইফে দাবির পরিমাণ ১২৪ কোটি ৭১ লাখ; নিষ্পত্তি ১১৯ কোটি ৭০ লাখ; এ হার ৯৫.৯৮%। পপুলার লাইফ: দাবি ৭০ কোটি; নিষ্পত্তি ৬৮ কোটি; হার ৯৭%। রূপালী লাইফ: দাবি ২৭ কোটি ৩০ লাখ; নিষ্পত্তি ২৭ কোটি ১ লাখ; হার ৯৮.৯৩%।
এছাড়া আকিজ তাকাফুলের নিষ্পত্তির হার ৯৭.৪%, আলফা ইসলামী ১০০%, আস্থা লাইফ ৯৯.৫২%, বাংলা ইসলামী ৯৬.৯০%, চার্টার্ড লাইফ ৯৭.৩১%, লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ ১০০%, মার্কেন্টাইল লাইফ ১০০%, শান্তা লাইফ ১০০%, সোনালী লাইফ ৯৮.৬১%, ট্রাস্ট ইসলামী ৯৯.৪৭%, জেনিথ লাইফ ৯৫.১৫%।
নন-লাইফ ইনস্যুরেন্সে দুরবস্থা আরও প্রকট
নন-লাইফ শাখায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৪৬টি কোম্পানির কাছে দাবি জমা পড়ে ৩,৬০৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। কিন্তু গ্রাহকদের কাছে ফেরত গেছে মাত্র প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ৪৬টির মধ্যে কেবল ১টি প্রতিষ্ঠানই ৯৫%এর বেশি দাবি নিষ্পত্তি করতে পেরেছে-এটা খাতটির দুরবস্থার বড় সূচক।
ব্যতিক্রমী পারফরমার
সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স: দাবি ৪ কোটি ৫ লাখ; নিষ্পত্তি ৩ কোটি ৮৮ লাখ; হার ৯৫.৯১% নন-লাইফে সর্বোচ্চ।
বিপুল অঙ্কের দাবি ঝুলে থাকায় অনেক গ্রাহক মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকেন, জটিল প্রক্রিয়ায় হয়রানি হয়। ইতিবাচক উদাহরণগুলো দেখায়, সুশাসন ও প্রতিশ্রুতি থাকলে দাবি নিষ্পত্তি কঠিন নয়। যে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত পরিশোধ করছে, তারা শিল্পে আস্থার কেন্দ্র হয়ে উঠছে।





