বি২৪ নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে সংকটে থাকা নয়টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অবসায়নের অনুমোদন দিয়েছে। উচ্চ খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ধাপে ধাপে অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র জানায়, ৩০ নভেম্বর গভর্নও ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরে যাচা-বাছাই করে যে ৯টি এনবিএফআইকে অবসায়নের প্রক্রিয়ায় নিচ্ছে, সেগুলো হলো-পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫ অনুযায়ী এসব সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এর আগে উচ্চ খেলাপি ঋণ, গুরুতর মূলধন ঘাটতি এবং আমানত ফেরত দিতে অক্ষমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে “অব্যবহারযোগ্য” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ প্রতিষ্ঠানেই খেলাপি ঋণের হার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এফএএস ফাইন্যান্স: খেলাপি ৯৯.৯৩%, লোকসান ১,৭১৯ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফাইন্যান্স: খেলাপি ৯৮%, লোকসান ১,০১৭ কোটি । বিআইএফসি: খেলাপি ৯৭.৩০%, লোকসান ১,৪৮০ কোটি। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং: খেলাপি ৯৬%, লোকসান ৪,২১৯ কোটি। পিপলস লিজিং: খেলাপি ৯৫%, লোকসান ৪,৬২৮ কোটি। আভিভা ফাইন্যান্স: খেলাপি ৮৩%, লোকসান ৩,৮০৩ কোটি। প্রিমিয়ার লিজিং: খেলাপি ৭৫%, লোকসান ৯৪১ কোটি। জিএসপি ফাইন্যান্স: খেলাপি ৫৯%, লোকসান ৩৩৯ কোটি। প্রাইম ফাইন্যান্স: খেলাপি ৭৮%, লোকসান ৩৫১ কোটি ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করতে সরকারের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশ ক্ষুদ্র আমানতকারীদের পাওনা ফেরত দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।
২০২৩ সালের ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন’ অনুযায়ী, আমানতকারীর স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম, দায় পরিশোধে ব্যর্থতা ও মূলধন সংরক্ষণে অক্ষমতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ রয়েছে।
২২ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবসায়নের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে।
এনবিএফআই খাতের সামগ্রিক চিত্র
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫টি এনবিএফআই সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠান সমস্যাগ্রস্ত। মোট খেলাপি ঋণ ২১,৪৬২ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮৩.১৬%। অন্যদিকে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা ১৫টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপির হার মাত্র ৭.৩১%।
এনবিএফআই খাতে মোট আমানত প্রায় ৪৮,৯৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ২০ প্রতিষ্ঠানের আমানত ২২,১২৭ কোটি টাকা। গ্রাহকের নিট ব্যক্তি আমানত প্রায় ৪,৯৭১ কোটি টাকা, যা ফেরত দেওয়া জরুরি বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অবসায়নের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা চাকরিবিধি অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।





