দেশের বড় বড় ঋণখেলাপিরা এখনো দাপটের সঙ্গে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রকাশ্যে বড় বড় মন্তব্য করছেন, এমন অভিযোগ তুলেছেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি তপন চৌধুরী। বিডার এক সংলাপে তিনি বলেন, জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে ঋণখেলাপিদের অবাধ চলাফেরা ব্যাংক খাতে আস্থা আরও কমিয়ে দিচ্ছে, অথচ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার।আজ বৃস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার আয়োজিত সংলাপে শিল্প খাতের ৫০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী অংশ নেন। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঋণখেলাপি সমস্যার কথা বলা হলেও বাস্তব পদক্ষেপ নেই।তিনি অভিযোগ করেন, জনগণের জমা করা অর্থ ব্যবহার করে যারা বড় খেলাপি হয়েছেন, তারা দেশের ভেতরে-বাইরে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছেন এবং উঁচু স্বরে নানা মন্তব্যও করছেন; অথচ তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তি নেই।অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
ব্যাংকিং খাতে আস্থাহীনতার চিত্র
তপন চৌধুরী বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। অনেক আমানতকারী এখনো তাদের জমা টাকার প্রাপ্য অংশ ফেরত পাননি।দুর্বল ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিলেও অন্যান্য দুর্বল ব্যাংকের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা
তপন চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সেই চাপ নেই। তাই ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অন্তত কিছু কঠোর উদাহরণ তৈরি করবে। তিনি বলেন, দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে সরকার যেন প্রমাণ করতে পারে“কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
ডান্ডা নয়, আইনেই সমাধান: গভর্নরের প্রতিক্রিয়া
স্কয়ার এমডির বক্তব্যের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, অতীতে ব্যবসায়ীদের ওপর কঠোর ক্র্যাকডাউন অর্থনীতিকে স্থবির করেছিল। তাই বলপ্রয়োগ নয়, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পথেই এগোতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থ পাচারকারী ও কমপ্লায়েন্স নিয়ে মন্তব্য
গভর্নর জানান, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বহু মামলা হয়েছে, যা এখন আদালতের অধীন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কারখানা বা উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার কোনো নীতি নেই। ব্যক্তি যদি অনিয়ম করেন, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে; তবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন যেন না থামে, সেটাই ব্যাংকের কৌশল।
কারখানা সচল রাখা হবে, ব্যক্তি ছাড় পাবেন না
গভর্নর উদাহরণ দিয়ে বলেন, বেক্সিমকো টেক্সটাইল ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। এমনকি এস আলম গ্রুপ অথবা বিদেশে অবস্থানরত সামিটের মালিকদের অনুপস্থিতিতেও তাদের কারখানা সচল রয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও কর্মসংস্থান বজায় রাখা জরুরি, তাই প্রতিষ্ঠান চালু রেখে ব্যক্তি পর্যায়ে কঠোরতা অব্যাহত থাকবে।





