দেশের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছে। সিপিডি বিশেষজ্ঞরাও সতর্ক করেছেন রাজস্ব সংগ্রহ না বাড়ালে ভবিষ্যৎ অর্থনীতি বড় ঝুঁকিতে পড়বে। সেমিনারে ব্যাংক সংকট, কর ব্যবস্থা ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিয়েও আলোচনা হয়।
আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এবং ‘এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ উপস্থাপন এক সেমিনারে দেশের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ জানিয়েছেন নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা।
সেমিনারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছে এবং এ বাস্তবতা স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা ৭ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ না হওয়ায় কার্যত সরকার ব্যয় নির্বাহে ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্কার ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে। তিনি মন্তব্য করেন, একসময় বাজেটে কৃষি ও শিক্ষা ছিল অগ্রাধিকার খাত, কিন্তু এখন সেগুলোকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বড় ব্যয়ের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ। এতে উন্নয়ন ব্যয় সংকুচিত হওয়ায় অর্থনীতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ আলোচক হিসেবে মত দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।
ব্যাংকিং খাতের সংকট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি জানান, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ ব্যাংকের সংযুক্তির কাজ দ্রুত এগোচ্ছে এবং ডিপোজিট গ্যারান্টি এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ করা হয়েছে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের অর্থ বিতরণ শুরু হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গভর্নর জানান, নতুন একীভূত ব্যাংকটি প্রথম বা দ্বিতীয় বছরের মধ্যেই মুনাফায় ফিরতে পারে এবং এতে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকসহ মোট ৭৬ লাখ পরিবার তাদের জমা অর্থ ফেরত পাবেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে এখনই কর ব্যবস্থার সংস্কার, রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং ব্যয় কমানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। রাজস্ব ঘাটতি কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে এবং অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল হয়ে পড়বে বলে তারা সতর্ক করেন।





