জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের বড় অংশ পছন্দমতো চাকরি পাচ্ছেন না। বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৬ শতাংশ স্নাতক আংশিক বেকারত্বে ভুগছেন। তারা টিউশনি, কল সেন্টার বা খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত হলেও পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন না। অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাবই প্রধান বাধা হিসেবে উঠে এসেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের কর্মসংস্থান সংকট
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী আংশিক বেকারত্বে রয়েছেন। তারা মূলত টিউশনি, কোচিং বা কল সেন্টারের মতো কাজ করছেন। গবেষণায় বলা হয়, ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা কাঙ্খিত চাকরি পাচ্ছেন না।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত বিআইডিএসের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা ফেলো তাহরীন তাহরিমা চৌধুরী জানান, ৫১৫টি কলেজ থেকে স্নাতক করা ১,৬৩৯ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের জরিপের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
আংশিক বেকারত্বের চিত্র
গবেষণায় দেখা যায়, স্নাতকদের কর্মসংস্থানকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ২৪% চাকি রতে যুক্ত; ১.৬% নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; ৭% টিউশনি করছেন; ৫.৫% খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত;৩৩% চাকরি খুঁজছেন; এবং ২৯% দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন।
অধিকাংশ স্নাতকই নিজেদের ‘বেকার’ মনে করেন। তবে আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেও তাকে বেকার বলা যায় না। ফলে তারা পুরোপুরি বেকার নন, বরং আংশিক বেকারত্বে ভুগছেন।
অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাব
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৬১% স্নাতকের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। মাত্র ৩৭% শিক্ষার্থীর কিছু অভিজ্ঞতা ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাননি ৫৫% স্নাতক। ফলে চাকরির পরীক্ষায় ডাক পেলেও তারা কাঙ্খিত পদে যোগ দিতে পারছেন না। গবেষকেরা পরামর্শ দেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ বাড়াতে হবে।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে বলা হয়েছিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৬% স্নাতক ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত বেকার থাকেন। নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
শহর বনাম গ্রামের শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য
বিআইডিএসের আরেক গবেষণায় দেখা যায়, শহরের শ্রমিকরা গ্রামের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি আয় করেন। শহরে মাসিক গড় বেতন ৮,৯৪৫ টাকা। গ্রামে মাসিক গড় বেতন ৩,৩৯০ টাকা।
২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শহরে বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১১%, আর গ্রামে মাত্র ৪%। ফলে গ্রাম-শহরের বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে।
উন্নয়নের ভারসাম্য জরুরি
গবেষকেরা বলেন, অর্থনৈতিক সুবিধা মূলত মহানগরে সীমাবদ্ধ। ছোট শহরগুলো পিছিয়ে পড়ছে। অবকাঠামো, শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো না হলে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়।





