রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। শীর্ষ ৩২ গ্রাহকের কাছেই আটকে আছে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ, যা ব্যাংকের মোট ঋণের বড় অংশ। একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম, বিশেষ ছাড় এবং রাজনৈতিক প্রভাব সব মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংক এখন গভীর আর্থিক চাপে।
রূপালী ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ সীমিতসংখ্যক বড় গ্রাহকের কাছে কেন্দ্রীভূত। ব্যাংক নথি অনুযায়ী, ৩২টি বৃহৎ গ্রাহকের ঋণই মোট ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। এসব ঋণের বড় অংশই এখন খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত, যার পরিমাণ ১৪ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা।
একক গ্রাহক ঋণসীমা লঙ্ঘন
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকি এক্সপোজার নির্ধারিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এসব বড় গ্রাহকের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এই সীমা অতিক্রম করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক মূলধনের ১০ শতাংশ ছাড়ালে যাদের বড় ঋণগ্রহীতা ধরা হয়, এমন গ্রাহকের সংখ্যাও রূপালী ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসব ঋণ ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলামের দায়িত্ব নেওয়ার আগের। দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলাপি আদায়ে মামলা, পুনঃতফসিল এবং নীতিমালাভিত্তিক সমাধানের চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নন-ফান্ডেড ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তা ফান্ডেড ঋণে রূপান্তর করতে হয়েছে, ফলে ঝুঁকি বেড়েছে।
ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনা ও দুর্বল তদারকির সুযোগে বড় গ্রাহকরা একাধিকবার বিশেষ ছাড় পেয়েছেন। কর্মসংস্থান, বাজারে পণ্যের সংকট বা শিল্পে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়েছে, যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের হারে রূপালী ব্যাংকের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। সর্বশেষ হিসাবে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশের বেশি, যা আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমিত পরিসরে মুনাফা দেখাতে পেরেছে ব্যাংকটি।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপালী ব্যাংকের প্রয়োজনীয় মূলধনের বিপরীতে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। শীর্ষ খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্ধারিত লক্ষ্যের তুলনায় খুব সামান্য অর্থ আদায় সম্ভব হয়েছে, যা ব্যাংকের তারল্য ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ব্যাংকের কয়েকটি শীর্ষ শাখায় ঋণের বড় অংশ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট শাখা বেছে নেয় এবং প্রভাব খাটিয়ে সেখান থেকেই বড় অঙ্কের ঋণ নেয়, যা শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের সামগ্রিক ঝুঁকি বাড়ায়।





