দেশে আর্থিক শিক্ষা বিস্তারে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ধীরে ধীরে বড় পরিসরে পৌঁছাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামে ৪৮ লাখের বেশি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৬ হাজার ৪৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামে খোলা হয়েছে ৪৮ লাখ ৫ হাজার ব্যাংক হিসাব। যদিও দেশে মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার লাখের বেশি, তবু স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
খোলা হিসাবগুলোর মধ্যে ৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায়, আর শহরাঞ্চলে রয়েছে ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ হিসাব। রাজধানী ও সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত শাখার আওতাধীন স্কুলগুলোকে শহরভিত্তিক হিসাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের এসব হিসাবে মোট জমা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীভিত্তিক হিসাবে ছাত্র ও ছাত্রীর অংশগ্রহণ প্রায় সমান। এর মধ্যে ছাত্র ৫০ দশমিক ৮১ শতাংশ ও ছাত্রী ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে দুটি ছাড়া সব ব্যাংকই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।
আর্থিক শিক্ষা আরও বিস্তৃত করতে চলতি বছর থেকে প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মার্চ মাসে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা ও লেনদেন সেবা নিশ্চিত করা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। এ ক্ষেত্রে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাধিক ব্যাংকের দ্বৈত কার্যক্রম এড়াতে পারস্পরিক সমন্বয়ের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ক্যাশলেস লেনদেনের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক শিক্ষার বিস্তার ছাড়া ক্যাশলেস লেনদেন সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যেই প্রতিটি শাখাকে একটি করে স্কুলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব শাখা অফিসের আওতাধীন স্কুলগুলোর বেতন ও অন্যান্য লেনদেন ডিজিটাল করা হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও ডিজিটাল লেনদেনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তর করতে হবে। এ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮৭ হাজার হিসাব সাধারণ হিসাবে রূপান্তর হয়েছে।
চলতি বছরে প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে কমপক্ষে ৩০০টি নতুন হিসাব খোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০০টি হিসাব খোলার নির্দেশনা ছিল।
২০১০ সালের আগে ১৮ বছরের কম বয়সীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে পারতেন না। টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য সামনে রেখে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প জমায় হিসাব খোলার সুযোগ চালু করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ও অভিভাবকের সম্মতিতে মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়েই শিক্ষার্থীরা হিসাব খুলতে পারেন।
ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয় ও আর্থিক ধারণা তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জমার ওপর সর্বোচ্চ সুদ দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আর্থিক শিক্ষার ঘাটতির কারণে দেশের একটি বড় অংশ এখনো আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবার বাইরে। বর্তমানে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা ১১ হাজার ৪০১টি। প্রতিটি শাখার মাধ্যমে একটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়বে। পরবর্তী ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন ও অন্যান্য লেনদেন সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

