B24NEWS

দেশে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক চালুর উদ্যোগ

ব্যাংক। প্রতীকী ছবি

দেশে প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত এই ব্যাংক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত নিতে পারবে এবং জামানত ছাড়াই ঋণ দেবে। দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সামনে রেখে তৈরি হয়েছে আইনের খসড়া।

ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক কী এবং কেন

দেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও এনজিও। তবে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাংকের মতো আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কাঠামো তৈরি করা, যেখানে ঋণ ও সঞ্চয়ের সুযোগ থাকবে একসঙ্গে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতিমধ্যে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে। এতে বলা হয়েছে, এই ব্যাংক সামাজিক ব্যবসার নীতিতে পরিচালিত হবে এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

গত ১৭ মে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তাঁর মতে, ভবিষ্যতের ব্যাংকিং হবে বিশ্বাসভিত্তিক, যেখানে জামানতের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

এই বক্তব্যের পরপরই আইনের খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়। যদিও খসড়াটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এমআরএ এতে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়নি।

এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬৮৩টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৩ কোটি ২৩ লাখ মানুষ, যাদের বড় অংশই নারী। মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকার বেশি।

প্রস্তাবিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক শুধু ঋণ দেবে না, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, বিপণন, কারিগরি ও প্রশাসনিক পরামর্শও দেবে। লক্ষ্য থাকবে ক্ষুদ্র উদ্যোগকে টেকসই করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরি।

আইনের খসড়া অনুযায়ী, ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আসবে ঋণগ্রহীতা-শেয়ারমালিকদের কাছ থেকে, বাকি ৪০ শতাংশ দেবেন উদ্যোক্তারা।

পরিচালনা পর্ষদ

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হবে সাত সদস্যের। এর মধ্যে তিনজন পরিচালক হবেন ঋণগ্রহীতা শেয়ারমালিকদের প্রতিনিধি, তিনজন সাধারণ শেয়ারমালিকদের মনোনীত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকারবলে পর্ষদের সদস্য থাকবেন।

খসড়ায় বলা হয়েছে, এমআরএর অধীনে আলাদা একটি বিভাগ গঠন করে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। তবে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন এ বিষয়ে খসড়ায় স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, চূড়ান্ত আইনে এই বিষয়টি সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে।

ভারতে ২০১৪ সালে এনজিও হিসেবে কাজ করা প্রতিষ্ঠান বন্ধন ব্যাংক লাইসেন্স পায় এবং পরে আরও কয়েকটি স্মল ফিন্যান্স ব্যাংক গড়ে ওঠে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, কেনিয়া, নাইজেরিয়াসহ বহু দেশেই ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

বাংলাদেশের বড় কয়েকটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সরকারের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে কেউ কেউ মূলধনের পরিমাণ ও আইনি কাঠামো নিয়ে আরও পর্যালোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন।

Exit mobile version